রাম নাম না বললে বাংলায় তার জায়গা নেই।                       

  • 15 March, 2021
  • 0 Comment(s)
  • 667 view(s)
  • লিখেছেন : আফরোজা খাতুন
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিন্যনাথ ওরফে অজয় সিং বিস্ত বাংলায় এসে বলে গেলেন, রাম নাম না বললে বাংলায় তার জায়গা নেই। বাংলা নিয়ে অনেকগুলো অভিযোগের মধ্যে অন্যতম হলো, বাংলায় লাভ জেহাদ চলে এবং মেয়েদের এখানে  নিরাপত্তা নেই। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, বাংলায় বিজেপি এলে সব অনিয়ম দূর  হবে। তাহলে মেনে নিতে হয় যোগীরাজ্যে নারী নির্যাতন হয় না।

  উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিন্যনাথ ওরফে অজয় সিং বিস্ত বাংলায় এসে বলে গেলেন, রাম নাম না বললে বাংলায় তার জায়গা নেই। বাংলা নিয়ে অনেকগুলো অভিযোগের মধ্যে অন্যতম হলো, বাংলায় লাভ জেহাদ চলে এবং মেয়েদের এখানে  নিরাপত্তা নেই। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, বাংলায় বিজেপি এলে সব অনিয়ম দূর  হবে। তাহলে মেনে নিতে হয় যোগীরাজ্যে নারী নির্যাতন হয় না। কিন্তু ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে যোগীরাজ্যে মহিলাদের উপর ঘটে যাওয়া অপরাধের সংখ্যা ৫৯,৮৫৩।  গোটা দেশে মেয়েদের উপর ঘটে যাওয়া অপরাধের যে ঘটনাগুলো নথিভুক্ত হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি যোগী আদিত্যনাথের বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে। উত্তরপ্রদেশে নারী ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর খুনের ঘটনার খবর আমাদের নজরে পড়ে। অনেকক্ষেত্রেই প্রভাবশালী ব্যক্তি অপরাধে যুক্ত থাকলে অভিযোগ প্রমাণ করা কঠিন হয়। উন্নাও গণধর্ষণ ও হত্যার সঙ্গে যুক্ত বলে বিজেপি-র বিধায়ক কুলদীপ সিংহ সেঙ্গার মামলায় অপরাধী সাব্যস্ত হন। হাথরাসের তরুণী গণধর্ষণের মারা গেলে পুলিশি তৎপরতায় জোর করে মধ্যরাতে মৃতদেহ দাহ করা হয়। হাথরাসের পর বলরামপুর। দলিত ও নাবালিকা ধর্ষণ, খুন, যৌন নিগ্রহের ঘটনায় যোগীরাজ্য নিয়মিত খররের শিরোনামে থাকছে। আর সেই বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বাংলায় বিজেপি শাসন এনে মেয়েদের নিরাপত্তা দেওয়ার অভয় দেন!

ভালবাসার সম্পর্কের মাঝে জেহাদ শব্দ চালু করতে হয়েছে বিভেদের রাজনীতি করার জন্য। কে কাকে ভালবাসবে, কে কাকে বিয়ে করবে সেটা ব্যক্তির স্বাধীনতা। এই সম্পর্কের মাঝে ঢুকে, যুগল পিটিয়ে সংবিধান-বিরোধী কাজ করে যারা, তারাই নাকি দেশপ্রেমিক! আর মানুষ যখন মানুষকে ভালোবেসে আপন করে নেয়, প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের যেখানে চোখ রাঙানি থাকে না, সেটা হয়ে যায় জেহাদ? বাংলার প্রকৃতি, জলহাওয়ায় ভালোবাসার বাতাস বয়। বাইরের রূঢ়, ক্রুদ্ধ, বিদ্বেষের বাতাস বাংলা ফিরিয়ে দিতে জানে।

বাঙালি সংস্কৃতিতে মিশে আছে হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টান প্রভৃতি নানান ধর্মের মানুষ। এখানে প্রভু, গড, আল্লা, ঈশ্বরের পাশাপাশি বাস। রামনাম না বললে বাংলায় তার জায়গা নেই, এই মুর্খ ভাবনা বাঙালি চেতনায় কাজ করে না। বাংলার সন্তানরা লালন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, রোকেয়া, প্রীতিলতা প্রমুখ মানব সন্তানের উত্তরসূরি। ‘পূর্ব ও পশ্চিম’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ ‘ভারতবর্ষের ইতিহাস কাহাদের ইতিহাস’ এই সংক্রান্ত এক বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর বক্তব্য একদিন আর্যরা ভারতবর্ষে প্রবেশ করে অনার্যদের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। আর্যদের সঙ্গে অনার্য শূদ্রদের প্রতিলোম বিয়ে চলত। বৌদ্ধযুগে এই মেলামেশা আরও অবাধ হয়ে উঠেছিল। বৌদ্ধযুগের অবসানে হিন্দুসমাজ চেয়েছিল তাদের ধর্মের পুনঃসংস্কার করে একটা শক্ত প্রাচীর গেঁথে দিতে। এইসময় সবচেয়ে সমস্যা হয়েছিল বিশুদ্ধ ব্রাহ্মণ খুঁজে পাওয়া। তাই অনেক জায়গায় রাজার নির্দেশে পৈতে পরিয়ে ব্রাহ্মণ তৈরি করা হত। হিন্দুর ভারতবর্ষে যখন রাজপুত  রাজারা পরস্পর মারামারি কাটাকাটি করছিল তখন সেই বিচ্ছিন্নতার ফাঁক দিয়ে মুসলমানরা এদেশে প্রবেশ করে। এরপর ইংরেজ এসে ভারতবর্ষে একটা প্রধান স্থান অধিকার করেছে। প্রাবন্ধিক মনে করেছেন, স্বত্বের লড়াইয়ে দেশের উন্নতি নেই, লড়াই হোক সত্যের-‘ভারতবর্ষে যে- ইতিহাস গঠিত হইয়া উঠিয়াছে এ- ইতিহাসের  শেষ তাৎপর্য এ নয় যে, এ দেশে হিন্দুই বড়ো হইবে বা আর কেহ বড়ো হইবে। ভারতবর্ষে মানবের ইতিহাস একটি বিশেষ সার্থকতার মূর্তি পরিগ্রহ করিবে, পরিপূর্ণতাকে একটি অপূর্ব আকার দান করিয়া তাহাকে সমস্ত মানবের সামগ্রী করিয়া তুলিবে – ইহা অপেক্ষা কোনো ক্ষুদ্র অভিপ্রায় ভারতবর্ষের ইতিহাসে নাই।’ ক্ষুদ্র অভিপ্রায়ে যাঁরা মেরুকরণের রাজনীতি করছেন, রবীন্দ্রনাথের বাংলা ঠিক সময়মতো তার জবাব দেবে।

         

লেখক  : কলেজ শিক্ষক, সমাজকর্মী ও প্রাবন্ধিক                

0 Comments

Post Comment